৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | শুক্রবার

ঝুপড়ি ঘরে জীবনের সংগ্রাম: খোকসায় মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত এক নারীর করুণ জীবন

মিলন, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার খোকসার শোমসপুর রোডের কাদিরপুর গ্রামে জেলা বোর্ডের জমির ওপর পাটখড়ি ও বাঁশ দিয়ে তৈরি একটি ঝুপড়িতে প্রায় পাঁচ-ছয় বছর ধরে বসবাস করছেন এক অজ্ঞাত বৃদ্ধা নারী। গ্রামের মানুষ তাঁকে দুর্বল মানসিক অবস্থার একজন বলেই চেনেন। তবে তাঁর নাম, পরিবার কিংবা অতীত পরিচয় কারও জানা নেই।

মলিন একটি শাড়ি পড়ে তিনি প্রতিদিন ঝুপড়ির পাশে মাটির চুলায় রান্না করার চেষ্টা করেন। চারপাশে ভাঙাচোরা ছাউনির নিচে কয়েকটি কলসি, কিছু হাঁড়ি-পাতিল, আর একটি চুলাই যেন তাঁর সমগ্র সংসার। ক্ষুদ্রতম চাহিদাও এখানে অপ্রাপ্তির মতো।

ঝড়-ঝঞ্ঝার সাথে নিত্য লড়াই

প্রথমে তিনি পাটখড়ি ভেঙে একটি ছোট ঠাঁই বানিয়ে রাত কাটাতেন। পরে প্রতিবেশীরা মানবিক কারণে তাঁর ভাঙা ঘর মেরামত করে দেন। তবুও ঝড়-বৃষ্টি-শীত-গরম—প্রকৃতির প্রতিটি রূপ তাঁর কাছে দুঃসহ অভিজ্ঞতা। স্থানীয়দের মতে, দিনকে দিন তাঁর ঘর বারবার ভেঙে যায়, আবার প্রতিবেশীরাই ঠিকঠাক করে দেন।

না খেয়ে দিন কাটানোর গল্প

প্রতিবেশীরা জানান, ওই নারী কারও সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কথা বলেন না, সুস্পষ্ট কিছু প্রকাশ করেন না। খাবারের জন্য মূলত ভিক্ষার ওপর নির্ভরশীল। অনেকে বলেন, টানা কয়েকদিন ভাত না খেয়ে থেকেছেন তিনি। অনেক সময় লতা-পাতা সংগ্রহ করে তা রান্না করেই কাটান দিন। গোসল বা শরীরচর্চা—সবই অনিয়মিত।

“বাঁচতেই হবে”—অদম্য টিকে থাকার আকুতি

গ্রামবাসীর ভাষায়, “তিনি নিজের পরিবারের কথা মনে করেন কি না, কেউ জানি না। তবে তাঁর মাঝে বেঁচে থাকার অদ্ভুত আকুতি দেখা যায়।” ঝুপড়ির পাশে প্রতিদিন লতা-পাতা দিয়ে রান্নার চেষ্টা করেন, প্রতিক্রিয়া সীমিত হলেও জীবনকে আঁকড়ে থাকার চেষ্টা স্পষ্ট।

মানবিকতার ডাক

পাঁচ-ছয় বছর ধরে একই স্থানে পড়ে থাকার পরও ওই নারীর পরিচয় বা পরিবারের খোঁজ মেলেনি। স্থানীয়দের মতে, এখনই প্রশাসনের নজরদারি এবং সামাজিক উদ্যোগ জরুরি। চিকিৎসা মূল্যায়ন, ভাতা, পুনর্বাসন বা পরিবার সন্ধান—যা সম্ভব তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা দরকার।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা সমাজসেবা অফিস এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে তাঁকে সহায়তার জন্য। একইসাথে গণমাধ্যম ও সামাজিক সংগঠনগুলো বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরলে তিনি পেতে পারেন চিকিৎসা ও নিরাপদ আশ্রয়—যা প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার।

👉 যে কেউ তাঁর পরিচয় জানেন বা সাহায্য করতে আগ্রহী হলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, রেডক্রস বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগের অনুরোধ করা হচ্ছে।

Scroll to Top