৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | শুক্রবার

গোয়ালন্দে ইমাম মেহেদী দাবিদার নুরাল পাগলার লাশ পুড়িয়ে দিয়েছে উত্তেজিত জনতা

রাজবাড়ী ভয়েস ডট কম: রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় চরম উত্তেজনার মধ্যে ইমাম মেহেদী দাবিদার নুরাল পাগলার লাশ উত্তেজিত জনতা তুলে নিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুম্মার নামাজের পরপরই এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার আনসার ক্লাব চত্বরে বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মানুষ জড়ো হয়ে নুরাল পাগলার আস্থানায় হামলা চালায়। এসময় পুলিশের দুটি গাড়ি, ইউএনও’র গাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং মাজারে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ইটপাটকেল নিক্ষেপে অন্তত ৫০ জন আহত হয়। আহতদের গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তবে বিকেল চারটার দিকে পরিস্থিতি আবারও বেকাবু হয়ে পড়ে। উত্তেজিত জনতা নুরাল পাগলার বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। পরে তার কবর ভেঙে মরদেহ বের করে মিছিল সহকারে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পদ্মা মোড়ে নিয়ে যায় এবং সড়কের উপর পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে লাশ পুড়িয়ে ফেলে।

ঘটনার পর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এলাকায় এখনও থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।

এ ঘটনায় রাজবাড়ী, বালিয়াকান্দি, পাংশা ও কালুখালী উপজেলায় তৌহিদী জনতা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।

এর আগে, নুরাল পাগলার মৃত্যুর পর (২৩ আগস্ট) তার পরিবার নিজ বাড়ির সামনে প্রায় ১২ ফুট উঁচু কাঠামোর ভেতর তাকে কবর দেয়। পরে সেটি কাবা শরীফের আদলে রঙ করা হয় এবং “হযরত ইমাম মাহদী (আ.) দরবার শরীফ” লেখা ব্যানার টানানো হয়। এতে স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

পরবর্তীতে ইমাম পরিষদ ও তৌহিদী জনতা তিন দফা দাবি জানায়—
১. কবর থেকে কাবা শরীফের আদলে করা রঙ পরিবর্তন,
২. “ইমাম মাহদী (আ.) দরবার শরীফ” লেখা সাইনবোর্ড অপসারণ,
৩. কবরের উচ্চতা স্বাভাবিক করা।

পরিবার প্রথম দুটি দাবি মেনে নিলেও কবরের উচ্চতা নিয়ে আপত্তি থাকায় গত কয়েকদিন ধরে টানটান উত্তেজনা চলছিল। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার তা ভয়াবহ রূপ নেয়।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদুল রহমান বলেন, “জনতা আমার গাড়ি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের গাড়ি ও ওসির গাড়ি ভাঙচুর করেছে। নুরাল পাগলার কবর থেকে মরদেহ তুলে পুড়িয়ে দিয়েছে। এতে অনেকে আহত হয়েছে। পরিস্থিতি এখন প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”

Scroll to Top