রাজবাড়ী ভয়েস ডট কম : রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার কবরকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে অজ্ঞাতনামা প্রায় সাড়ে ৩ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতাসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ আগস্ট নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার মৃত্যু হলে তাকে গোয়ালন্দ পৌরসভার জুরান মোল্যার পাড়ায় দুই তলা সমান (প্রায় ১২ ফুট উঁচু) কাঠামোর ভেতরে কবর দেওয়া হয়। পরবর্তীতে কবরটি কাবা শরীফের আদলে রঙ করা হয় এবং ‘হযরত ইমাম মাহদী (আ.) দরবার শরীফ’ লেখা ব্যানার টানানো হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
এ নিয়ে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও স্থানীয় তৌহিদী জনতার প্রতিনিধি এবং নুরাল পাগলের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বৈঠক হলেও কবর নিচু করা নিয়ে সমাধান হয়নি। এর জের ধরে গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিক্ষুব্ধ জনতা আনসার ক্লাব চত্বরে জমায়েত হয়ে নুরাল পাগলের আস্তানায় হামলা চালায়।
এ সময় তারা পুলিশের দুটি গাড়ি ও ইউএনওর গাড়ি ভাঙচুর করে, দরবারে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে পদ্মার মোড়ে পুড়িয়ে ফেলে। হামলার ঘটনায় অন্তত ৫০ জন আহত হন, এর মধ্যে ১০-১২ জন পুলিশ সদস্যও ছিলেন। এ সময় মোঃ রাসেল মোল্যা (২৮) নামে এক বিক্ষোভকারী নিহত হয়।
ঘটনার পরদিন রাতেই গোয়ালন্দঘাট থানার এসআই সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে সরকারী কাজে বাধা, সরকারি সম্পদ ধ্বংস ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন।
শনিবার রাতে গোয়ালন্দ থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) যৌথ অভিযানে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক হিরু মৃধা, উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাসুদ মৃধা, শাফিন সরদার, এনামুল হক জনি ও কাজী অপুসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। রোববার আরও দু’জন—হায়াত আলী মৃধা ও জীবন সরদারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গোয়ালন্দঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং দরবার এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মামলায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মোঃ শরীফ আল রাজীব বলেন, ধৃত আসামি কাজী অপু আদালতে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, লাশ উত্তোলন ও মাজার ভাঙচুরের দায় স্বীকার করেছে। তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে।